প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান কূটনীতি হবে বাণিজ্য ও অর্থ সংক্রান্ত। বাণিজ্য মেলার নতুন স্থানে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের খরচ ও ব্যয় কমবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
শনিবার (১ জানুয়ারি) পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে গতকাল (শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর) ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে সরকারপ্রধান জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়োপযোগী এবং বিচক্ষণ উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের কাছেও একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। আমরা বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি।
তিনি বলেন, সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীল ‘উন্নয়নশীল’ দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। আমরা দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশে’ পরিণত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রয়োজন।
এ মেলা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পণ্য বহুমুখীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মেলা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের তাদের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাদি এবং নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে ক্রেতাদের অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। একইসাথে ক্রেতারাও এ বৃহৎ আয়োজন থেকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা পাবেন। এ মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশি উদ্যোক্তারা প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পণ্যের মানোন্নয়নে তৎপর হবেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থানীয় পণ্যকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করার প্রয়াস পাবেন।
তিনি আরও বলেন, গত দুই বছরে বিশ্ব ভয়ানক কোভিড-১৯ মহামারির সম্মুখীন হয়েছে, যা কার্যত ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমাদের সরকারের সময়োপযোগী ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে এবং প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রমের গতিশীলতা বজায় রাখা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ডিআইটিএফ-২০২২ স্থানীয় ও বিদেশি উৎপাদনকারী এবং ক্রেতাদের মধ্যে গভীর আগ্রহ এবং উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
বাণীতে তিনি ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২২’র সার্বিক সাফল্য কামনা করেন তিনি। প্রথমবারের মতো রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ মেলা শুরু হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বার্ষিক এ মেলার উদ্বোধন করেন।
বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ২২৫টি স্টলকে এবাররে মেলায় লিজ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২৩টি প্যাভিলিয়ান, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ান, ১৬০টি স্টল ও ১৫টি ফুড কোর্ট রয়েছে।
এছাড়া মেলায় প্রার্থনা কক্ষ, শিশুদের খেলার জায়গা, অফিস কক্ষ, চিকিৎসা কেন্দ্র, কর্মকর্তাদের জন্য অতিথি কক্ষ ও স্টোর রুম রয়েছে।
এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এ মেলা অনুষ্ঠিত হতো। তবে এ জায়গাটি দর্শনার্থী ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছোট হয়ে যেত।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করা যাবে। তবে সরকারি ছুটির দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলার স্টল খোলা থাকবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য মেলায় প্রবেশের টিকিট মূল্য ৪০ টাকা ও শিশুদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মেলায় যাওয়ার জন্য পরিবহন সুবিধা দিতে ৩০টি বিআরটিসির বাস প্রদান করেছে সরকার। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে দর্শনার্থীরা মেলায় যেতে পারবেন।
১১টি দেশের ব্যবসায়ীরা এবারের মেলায় অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে গত বছর করোনার কারণে মেলা হয়নি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।